Monday, August 22, 2016

জ্বীনের মসজিদ

অসংখ্য জ্বীন রাতের আঁধারে মসজিদটি নির্মাণ করেছে। নির্মাণের পর ক’বছর জ্বীনেরা ওই মসজিদে ইবাদতও করেছে। গভীর রাতে তাদের জিকিরের আওয়াজ ভেসে আসত। কিংবা মসজিদটি তৈরিতে টাকার যোগান দিয়েছে জ্বীন।’ এসব কথিত জনশ্রুতির কারণে একশ’ ২৭ বছর আগের নান্দনিক স্থাপনার ‘মসজিদ-ই-জামে আবদুল্লাহ’ বর্তমানে জ্বীনের মসজিদ নামে পরিচিতি। 



লক্ষ্মীপুরের রায়পুর শহরের দেনায়েতপুর এলাকায় মসজিদটি ১৮৮৮ সালে ৫৭শতাংশ জমির ওপর নির্মিত হয়। ১১০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৭০ ফুট প্রস্থের এ মসজিদে রয়েছে ৩টি গম্বুজ ৪টি মিনার। ইটের তৈরি আদি এ স্থাপনায় মিনার, গম্বুজ ও মূল ভবন নকশায় রয়েছে শতভাগ মুন্সিয়ানা। স্থাপনার 
নান্দনিকতায় হৃদয় ছুঁয়ে যাবে যে কারোরই। মসজিদের তলদেশে ২০ থেকে ২৫ ফুট নিচে রয়েছে একটি গোপন ইবাদতখানা। কয়েক যুগ ধরে ওই ইবাদত খানায় জমে থাকা বুক পরিমাণ পানির কূপ দেখলে আবারো জ্বীনের গল্প নিয়ে বাড়বে কৌতুহল। মসজিদের ভিটির উচ্চতা প্রায় ১৫ ফুট। ১৩ ধাপ সিঁড়ি ডিঙ্গিয়ে মসজিদে প্রবেশ করতে হয়। দেয়ালের প্রস্থ ৮ ফুট। সম্মুখের মিনারের উচ্চতা ২৫ ফুট। মসজিদের সামনে রয়েছে বিশাল পুকুর।


মসজিদের ২০ থেকে ২৫ ফুট তলদেশে থাকা পাকা গোপন ইবাদতখানায় প্রতিষ্ঠাতা মৌলভী আবদুল্লাহ সাহেব আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। তার মৃত্যুর ক’বছর পর ওই কক্ষ পানি ভর্তি কূপে পরিণত হয়। এ কূপে ঢুকতে মসজিদের দক্ষিণ পাশে রয়েছে পাকা সিঁড়ি। বার মাস এ কূপে কম বেশি পানি থাকা নিয়ে দর্শনার্থীদের কৌতুহল বেশি। দর্শনার্থীদের কেউ কেউ রোগ শোক থেকে মুক্তি পেতে ওই পানি নিয়ত মানত করে পান করে থাকেন। 


কথিত আছে, জ্বীন মসজিদটি রাতের আঁধারে তৈরি করে ইবাদত করতো। সে সময়ে স্থানীয় বাসিন্দারা অনেকে গভীর রাতে তাদের জিকিরের আওয়াজ শুনেছেন! মসজিদ তৈরিতে জ্বীন নিয়ে এমন গল্পের

সত্য মিথ্যা আর যাই থাকুক প্রতিদিন একশ’২৭বছর বয়সের এ নান্দনিক স্থাপনা দেখতে দর্শনার্থীরা আসছেন মসজিদ প্রাঙ্গনে। আগতদের অনেকেই বিভিন্ন নিয়ত মানত করে এ মসজিদ দেখতে আসেন। অনেকেই মনের ভাসনা পূর্ণ করতে মসজিদে আদায় করেন ইবাদত।


মসজিদটি জ্বীনের মসজিদ হিসেবে পরিচিত থাকলেও এটি মূলত: মাওলানা আবদুল্লাহ নির্মাণ করেছেন এবং জনশ্রুতিগুলোর কোন বাস্তব ভিত্তি নেই বলে জানিয়েছেন আবদুল্লাহ সাহেবের নাতি শফিক উল্যা মাহমুদী।  মাওলানা আবদুল্লাহ ভারতের দারুল উলূম দেওবন্দ মাদ্রাসায় দীর্ঘ ১৭ বছর পড়াশুনা করেন। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ওই ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে তিনি উচ্চতর দ্বীনী শিক্ষালাভ করে দেশে ফিরে এসে নিজ এলাকায় মসজিদ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি ভারতের দিল্লীর শাহী জামে মসজিদের হুবহু নমুনায় ১৮৮৮ সালে এ মসজিদ ও মসজিদের পাশে প্রতিষ্ঠা করেন একটি কওমী মাদ্রাসা ও মুসাফিরখানা। মসজিদের স্থাপনার এক তৃতীয়াংশ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার পর তার মৃত্যু হলে পরবর্তীতে তার ছেলে মাওলানা মাহমুদ উল্যা মসজিদের অসমাপ্ত কাজ করেন। বর্তমানে মাদ্রাসাটি চালু থাকলেও মুসাফিরখানা বন্ধ রয়েছে।


মসজিদে ৬টি লাইনে ৮০ থেকে ৮৫জন করে ৫শতাধিক মুসল্লী শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করেন। এতে এলাকার ও দূর দূরান্তের মুসল্লীরা অংশ নেন।