Monday, March 4, 2013

চট্টগ্রাম – মিরসরাই মহামায়া কৃত্রিম লেক

নৈসর্গিক সৌন্দর্যের এক অপূর্ব লীলাভূমি মিরসরাই। যেখানে গিরি-নদীর মিলনস্থলে ছায়া হয়ে দিগন্তে মিশে গেছে নীলাকাশ। এ যেন কোনো শিল্পীর ক্যানভাসে কল্পনার রঙে আঁকা ছবি। মিরসরাইয়ের এই সৌন্দর্যকে দেশের সীমানা পেরিয়ে পৃথিবীর মানুষের কাছে আরো সহজে পরিচয় করিয়ে দিতে এবং দেশের পর্যটন শিল্পকে আরো একধাপ এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে এখানে নির্মিত হয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক 'মহামায়া প্রকল্প'। যেখানে অসংখ্য পাহাড়ের বুক চিরে আসা ছোট-বড় অসংখ্য পাহাড়ি ছড়ার মিলন মোহনায় রয়েছে স্বচ্ছ সবুজ জলাধার। পাহাড়ি ঝরনা প্রবাহ হতে সৃষ্ট জলধারা এর সৌন্দর্য বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। মহামায়া প্রকল্পের আওতায় মাটির ড্যাম, এপ্রোচ রোড, স্পিলওয়ে, ইনট্রেক স্ট্রাকচার রয়েছে। এছাড়া দেশি-বিদেশি পর্যটকদের অবকাশ যাপনের জন্য পাহাড়ের খাঁজে নির্মাণ করা হবে অত্যাধুনিক কটেজ। যা প্রাকৃতিক দৃশ্যের সঙ্গে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগাবে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। প্রতিদিন এখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রচুর  প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকদের আগমন হয়। মিরসরাইয়ের মহামায়া প্রকল্প একটি উৎকৃষ্ট মানের শুটিং স্পট


চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ৮ নম্বর দুর্গাপুর ইউনিয়নের ঠাকুরদিঘী বাজার থেকে দুই কিলোমিটার পূর্বে পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে তোলা ১১ বর্গ কিলোমিটারের কৃত্রিম লেক নিয়ে গঠিত এ স্থান। এই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে লেক, পাহাড়, ঝর্ণা ও রাবার ড্যাম। লেকে চাইলে আপনি সাতার কাটতে পারেন এবং ইঞ্জিন চালিত নৌকায় চড়তে পারেন। সাতার কাটার সময় তীরের আসে-পাশে থাকা ভালো। কারণ লেকের পানি সাধারণত ভারী হয়ে থাকে, যার ফলে যে কেউ সামান্য সাতার কাটার পর দুর্বল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এই প্রকল্পের এলাকায় যে পাহাড়ি ঝর্ণা রয়েছে সেটিতে আপনাকে ইঞ্জিন চালিত নৌকার সাহায্যেই যেতে হবে। প্রতিনিয়ত মহামায়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য আর পাহাড়ী ঝর্ণার মাধুর্য্যে আত্মহারা হয়ে উঠেন হাজার হাজার পর্যটক। মহামায়া কৃত্রিম লেক ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের রূপে ও মাধুর্যে মুগ্ধ করেছে। ছুটির দিন ছাড়াও প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত পর্যটক পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য আর লেকের স্বচ্ছ জলে একটু ঘা ভিজাতে ছুটে আসেন।


বনভোজন ছাড়াও পরিবার-পরিজন নিয়ে দূর থেকে অনেকেই চলে আসেন মহামায়ার মায়ার টানে। বন্ধু-স্বজন সঙ্গে নিয়ে বারবার ছুটে আসছেন পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বয়ে যাওয়া নিরবধি পানির কলধ্বনি শুনতে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক মহামায়া, মুহুরী প্রকল্প, বাওয়াছড়া পর্যটন এলাকায় লেকের নীলাভ জলরাশিতে দাপাদাপি, ডিঙ্গী, ইঞ্জিন চালিত বোটে লেকের অপার দৃশ্য দর্শন, হৈ চৈ আর ছুটোছুটিতে লেক এলাকা উৎসব মঞ্চে পরিণত হয়। সব বয়সের নারী পুরুষ শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী এখানে এসে একাত্ম হয়ে যান আনন্দ উৎসবে। বিগত দিনের সমস্ত ক্লান্তি আর অবসাদ বিলীন হয়ে যায় লেকের অপার সৌন্দর্য্যের কাছে। মহামায়ার ভেতরের পাহাড়ের ঝরনা দেখতে ডিঙি, ইঞ্জিনচালিত বোট নিয়ে ঘুরতে বেড়িয়ে পড়েন পর্যটকরা। মহামায়া লেকের পানি পথে ইঞ্জিন চালিত বোর্ড দিয়ে রামগড় হেঁয়াকো, ফটিকছড়িসহ পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় সহজে যাতায়াত করা যায়।


 

কিভাবে যাবেনঃ


সড়ক পথেঃ


ঢাকা থেকেঃ বিআরটিসি এর বাসগুলো ছাড়ে ঢাকা কমলাপুর টার্মিনাল থেকে।আর অন্যান্য এসি, ননএসি বাস গুলো ছাড়ে সায়দাবাদ বাস ষ্টেশন থেকে। আরামদায়ক এবং নির্ভর যোগ্য সার্ভিস গুলো হল এস.আলম ও সৌদিয়া, গ্রীনলাইন, সিল্ক লাইন, সোহাগ, বাগদাদ এক্সপ্রেস, ইউনিক প্রভূতি। সবগুলো বাসই
মিরসরাই তে থামে। মীরসরাই বাস স্ট্যান্ড থেকে সি, এন জি বা অন্য কোন বাহনে ঠাকুরদিঘী নামক স্থান দিয়ে প্রবেশ করতে হয়।


চট্টগ্রাম থেকেঃ ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাওয়ার বাসগুলো অলঙ্কার, কে খান, কর্ণেলহাট বাস ষ্টেশন থেকে ছাড়ে। আর জেলার অভ্যন্তরের বিভিন্ন রুটের বাসগুলো মাদারবাড়ী, কদমতলী বাসষ্টেশন থেকে ছাড়ে। চট্টগ্রাম থেকে মীরসরাই আসতে হলে জেলার আভ্যন্তরীন রুটের বাস গুলোতে ভ্রমণ করতে হবে।


ফেণী থেকেঃ ফেণী শহর বা ফেণীর চৌমুহনী থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে নোয়াখালী, কুমিল্লা পরশুরাম, চাঁদপুর ও ফেনীর বাস চলাচল করে। যে কোন বাসে করে আপনি মীরসরাই বা ঠাকুরদিঘী চলে আসতে পারেন।



আকাশ পথঃ


ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের পথে বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্স সহ বিভিন্ন কোম্পানীর ফ্লাইট আছে।অনেক প্রতিষ্ঠান হওয়াতে এদের মধ্যে প্রতিযোগীতা বিদ্যামান ভাড়া সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রায় কাছাকাছি।এই লেখাটি লেখার সময় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আসতে বিমানে ৫০ মিনিট সময় নেয়।ভাড়া এবং সময়সূচী পরিবর্তনশীল হওয়ায় এগুলো এখানে দেয়া হয়নি, তা বিমান সংস্থাগুলোর ওয়েবসাইট থেকে জানা যাবে।


মীরসরাইতে কোন ভাল আবাসিক হোটেল নেই,তাই রাতে থাকতে হলে চট্টগ্রাম শহরে বা ফেনী শহরে চলে যেতে হবে।