চট্টগ্রাম – সীতাকুণ্ড নৈসর্গিক সৌন্দর্যের ইকো পার্ক
চট্টগ্রাম জেলার
সীতাকুণ্ড উপজেলার ঐতিহ্যবাহী চন্দ্রনাথ রির্জাভ ফরেস্ট ব্লকের প্রাকৃতিক
সৌন্দর্যে সুশোভিত চিরসবুজ বনাঞ্চলে বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্ক অবস্থিত। এটি
চট্টগ্রাম শহর থেকে ৩৫ কি.মি. উত্তরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং রেলপথের পূর্ব
পাশে অবস্থিত।
চট্টগ্রাম শহর হতে
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরে এগুতে থাকলে প্রথমে পাহাড়তলী এবং তারপর একে একে
কাট্টলী, সিটি তোরন, কুমিরা বাড়বকুন্ড অতিক্রম করতে করতে
পূর্ব পাশে চোখে পড়বে সুউচ্চ পাহাড়ের উপর চন্দ্রনাথ মন্দির, যার পাদদেশে অবস্থিত
বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্ক। সীতাকুণ্ড উপজেলা সদর
থেকে ২ কি.মি. দক্ষিণে ফকিরহাট বাজার সংলগ্ন মহাসড়কের পূর্ব পাশে রঙ্গিন ফটক সহ
সাইনবোর্ড ইকোপার্কের দিক নির্দেশনা দেয়।
ইকোপার্কে প্রবেশের সাথে সাথে আপনি একটি
বড় ডিসপ্লে ম্যাপ দেখতে পাবেন, যার মাধ্যমে আপনি ইকোপার্ক সম্পর্কে সম্পূর্ণ
ধারনা পাবেন। এ স্থান থেকে চন্দ্রনাথ মন্দিরের দূরত্ব
প্রায় ৫ কি.মি., আপনি পায়ে হেঁটে অথবা জীপ, মাইক্রোতে চড়ে সেখানে যেতে পারবেন। যে সকল ভ্রমনকারী প্রকৃতিকে ভালবাসেন প্রকৃতিকে খুব কাছের থেকে
উপভোগ করতে চান তারা অবশ্যই সীতাকুণ্ডে ইকো পার্ক এ আসতে
হবে।
উঁচুনিচু নির্জন
পাহাড়, হরিণ, ভালুক, বানর, খরগোশ এবং হনুমান সহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর সমাহার, পাখ
পাখালীর কলরব, প্রাকৃতিক ঝর্ণা, চিরসবুজ বৃক্ষরাজি সমৃদ্ধ ইকোপার্ক খুবই মনমুগ্ধকর।সন্ধায়
পশ্চিম আকাশে সূর্য যখন গোধূলীর রক্তিম আভা তৈরী করে ইকোপার্কে তখন এক নৈসর্গিক
পরিবেশের সৃষ্টি করে।
বোটানিক্যাল গার্ডেন
ও ইকোপার্কের প্রধান ফটকের ভিতরে ডান পাশে রয়েছে বোটানিক্যাল গার্ডেন ও
ইকোপার্কের প্রধান নার্সারী এবং তার অফিস।এই নার্সারীতেই আছে দেশ-বিদেশের নানা
প্রচলিত ও বিলুপ্ত প্রজাতীর ফুল, ফল ও ঔষধি গাছ যেমন – অর্জুন, তেলসুর, চাপালিস,
চুন্দুল, করই, জারুল, তুন, জাম, জলপাই সহ আরো অনেক।
বোটানিক্যাল গার্ডেনে
একটি চমৎকার অর্কিড হাউসও আছে।এখানে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রজাতীর প্রায় ৫০ ধরনের
অর্কিড আছে।ইকো পার্কের ভিতরেই একটা ওয়াচ টাওয়ার আছে সেখান থেকে অনেক দুর
পযর্ন্ত দেখা যায়। সীতাকুণ্ড ইকো পার্ক
অপরূপ প্রাকৃতিক সৌর্ন্দয্যের লীলাভূমি ।এই এলাকা বিভিন্ন ধরনের গাছ,
বুনফুল এবং গুল্মলতায় পরিপূর্ণ। সারা বছর জুড়েই অসংখ্য
দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আনাগোনায় এই স্থানটি মুখরিত থাকে।
পিকনিক কর্ণার:
বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ইকোপার্কে খাবার পানি, রেষ্টহাউস এবং টয়লেট সহ পিকনিকের
সকল সুযোগ সুবিধা বিদ্যামান।
সহস্রধারা ও
সুপ্তধারা জলপ্রপাত
এই চন্দ্রনাথ রিজার্ভ
ফরেষ্ট এলাকায় অনেক ছোট-বড় ঝর্ণা আছে।এই সকল ঝর্ণার মধ্যে বোটানিক্যাল গার্ডেন ও
ইকোপার্ক এলাকার মধ্যে দুটো ঝর্ণা রয়েছে।ঝর্ণা দুটি সহস্রধারা ও সুপ্তধারা নামে
পরিচিত।সহস্রধারা থেকে অবিরত পানি ঝরছে।কিন্তু সুপ্তধারা থেকে শীতকালে খুব কম
পরিমান পানি ঝরে, তবে বর্ষাকালে এগুলো তাদের পরিপূর্ণ ধারায় আবর্তিত হয়।এখানে
বলে রাখা ভাল এই সহস্রধারা ঝর্ণা সীতাকুণ্ডের ঐতিহ্যবাহী এবং ধর্মীয় তীর্থস্থান
সহস্রধারা নয়।
কিভাবে
যাবেনঃ
সড়ক পথেঃ
ঢাকা থেকেঃ বিআরটিসি
এর বাসগুলো ছাড়ে ঢাকা কমলাপুর টার্মিনাল থেকে।আর অন্যান্য এসি, ননএসি বাস গুলো
ছাড়ে সায়দাবাদ বাস ষ্টেশন থেকে। আরামদায়ক এবং নির্ভর যোগ্য সার্ভিস গুলো হল
এস.আলম ও সৌদিয়া, গ্রীনলাইন, সিল্ক লাইন, সোহাগ, বাগদাদ এক্সপ্রেস, ইউনিক
প্রভূতি। সবগুলো বাসই সীতাকুণ্ডে থামে। সীতাকুন্ড বাস স্ট্যান্ড
থেকে মাত্র ২ কিঃমিঃ দক্ষিণে ফকিরহাট নামক স্থান দিয়ে এ পার্কে প্রবেশ করতে হয়।
চট্টগ্রাম থেকেঃ ঢাকা
সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাওয়ার বাসগুলো অলঙ্কার,একেখান, কর্ণেলহাট বাস ষ্টেশন
থেকে ছাড়ে। আর জেলার অভ্যন্তরের বিভিন্ন রুটের বাসগুলো মাদারবাড়ী, কদমতলী
বাসষ্টেশন থেকে ছাড়ে। চট্টগ্রাম থেকে সীতাকুণ্ডে আসতে হলে জেলার আভ্যন্তরীন রুটের
বাস গুলোতে ভ্রমণ করতে হবে। তা ছাড়াও অলঙ্কার থেকে কিছু ছোট গাড়ী ছাড়ে ( স্থানী
ভাবে মেক্সী নামে পরিচিত) সেগুলো করেও আসা যাবে ফকিরহাট নামক
স্থানে।
রেলপথেঃ
ঢাকা থেকেঃ ঢাকা থেকে
ছেড়েঁ আসা দ্রুতগামী ট্রেন “ঢাকা মেইল”-ই শুধু সীতাকুণ্ডে থামে, এটি ঢাকা থেকে
ছাড়ে রাত ১১টায় এবং সীতাকুণ্ডে পৌঁছে পরদিন সকাল ৬.৩০ থেকে ৭টায়। অন্যান্য
আন্তঃ নগর ট্রেন গুলো সরাসরি চট্টগ্রামে চলে যায়।
শুধুমাত্র শিবর্তুদশী মেলার সময় সীতাকুণ্ডে থামে।
চট্টগ্রাম থেকেঃ
চট্টগ্রাম থেকে ৪টি আন্ত নগর ট্রেন ঢাকার উদ্দেশ্যে ছাড়ে (সকাল ৭টা, ৭.১৫ মিনিট, দুপুর ২টায় এবং রাত ১১টায়)। টিকেট অবশ্যই ২-৩দিন
আগে সংগ্রহ করতে হয়। চট্টগ্রাম থেকে কিছু লোকাল ট্রেনও ছাড়ে যেগুলো করে
সীতাকুণ্ডে আসা যায়, এগুলো ভোর ৫টায়, সকাল ৮টায়, ৯টায়, দুপুর ২টায় এবং
সন্ধ্যা ৭টা ৩০মিনিটে,এগুলোর সময়সূচী পরিবর্তনশীল।
আকাশ পথঃ
ঢাকা থেকে
চট্টগ্রামের পথে বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্স সহ বিভিন্ন কোম্পানীর ফ্লাইট আছে।অনেক
প্রতিষ্ঠান হওয়াতে এদের মধ্যে প্রতিযোগীতা বিদ্যামান ভাড়া সহ অন্যান্য সুযোগ
সুবিধা প্রায় কাছাকাছি।এই লেখাটি লেখার সময় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আসতে বিমানে ৫০
মিনিট সময় নেয়।ভাড়া এবং সময়সূচী পরিবর্তনশীল হওয়ায় এগুলো এখানে দেয়া হয়নি,
তা বিমান সংস্থাগুলোর ওয়েবসাইট থেকে জানা যাবে।
সীতাকুণ্ডে কোন ভাল
আবাসিক হোটেল নেই,তাই রাতে থাকতে হলে চট্টগ্রাম শহরে চলে
যেতে হবে।