Tuesday, March 5, 2013

চট্টগ্রাম – মিরসরাই মুহুরী সেচ প্রকল্প

নৈসর্গিক সৌন্দর্যের এক অপূর্ব লীলাভূমি মিরসরাই। যেখানে গিরি-নদীর মিলনস্থলে ছায়া হয়ে দিগন্তে মিশে গেছে নীলাকাশ। এ যেন কোনো শিল্পীর ক্যানভাসে কল্পনার রঙে আঁকা ছবি।


ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ বাজার থেকে ১২ কিলোমিটার পশ্চিমে মুহুরী সেচ প্রকল্প (ফেনীর দিক থেকেও মুহুরী প্রকল্পে যাওয়া যায়)।  বৃহত্তর চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অবস্থিত মুহুরী প্রকল্প দেশের ষষ্ঠ বৃহত্তম সেচ প্রকল্প।


চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার কিয়দাংশ এবং ফেনী জেলার ফেনী, সোনাগাজী, ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার কিয়দাংশের সর্বমোট ৪০,০৮০ হেক্টর জায়গা জুড়ে এই প্রকল্পের অবস্থান। ফেনী নদী, মুহুরী নদী এবংকালিদাস পাহালিয়া নদীর সম্মিলিত প্রবাহকে আড়ি বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে ৪০ ফোক্ট বিশিষ্ট একটি বৃহদাকার পানি নিয়ন্ত্রণ কাঠামো তৈরী করে ফেনী জেলার ফেনী সদর, ছাগলনাইয়া, পরশুরাম, ফুলগাজী, সোনাগাজী এবং চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাই উপজেলার কিয়দংশ এলাকায় বর্ষা মৌসুমে বন্যার প্রকোপ কমানো ও আমন ফসলে অতিরিক্ত সেচ সুবিধা প্রদানের উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়েছিল মুহুরী সেচ প্রকল্প। ১৯৭৭-৭৮ অর্থবছর থেকে শুরু হয়ে ১৯৮৫-৮৬ অর্থবছরে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। এই মুহুরী প্রকল্প এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মৎস্য জোন হিসেবে পরিচিত। এককথায় বলা যায় বাংলাদেশে মৎস্য চাষে বিপ্লব ঘটিয়েছে এই প্রকল্প। দেশের অনেক নামিদামি প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবে এখানে মৎস্য প্রকল্প গড়ে তুলেছে; বসুন্ধরা গ্রুপ, মেরিডিয়ান গ্রুপ, ক্লিফটন গ্রুপ, আবুল খায়ের কোম্পানি, রিঙ্কু ফিশ প্রজেক্ট সহ প্রায় দুই হাজার মৎস্য প্রকল্প রয়েছে এখানে।


খুবই সুন্দর একটা জায়গা এই মুহুরী প্রকল্প। যারা চট্টগ্রামের নেভালে গিয়েছেন মুহুরী প্রকল্পের প্রবেশদ্বার অনেকটা চট্টগ্রামের নেভালের মত দেখতে। এখানে এলে আপনি দেখতে পাবেন উইন্ড মিল, যা দেশে প্রথম নির্মিত। এই প্রকল্পের আওতাধীন যে বাঁধটি রয়েছে তা ফেনী নদীর উপর দিয়ে নির্মিত হয়েছে। বাঁধের একপাশে দেখতে পাবেন ভরা নদী আর অন্য পাশে দেখতে পাবেন প্রায় পানি শুন্য নদী। নদী যাদের কাছে টানে তাদের জন্য অন্যতম একটা প্রিয় জায়গা হতে পারে এটি। নৌকা করে নদীতে ঘুরে বেড়াতে পারেন চাইলে। শীত মৌসুমে মুহুরী প্রকল্পের অন্যতম আকর্ষণ সাইবেরিয়ার অতিথি পাখি। যদিও গুটি কয়েক সাইবেরিয় অতিথি পাখি আমাদের চোখে পড়েছে কারণ আমরা যে সময়ে মুহুরী প্রকল্পে গিয়েছিলাম সে সময়ে শীত মৌসুম পরিপূর্ণভাবে আসেনি এই অঞ্চলে।


বাঁধের উত্তরের নীল জলরাশি আর দক্ষিণের দিগন্ত বিস্তৃত চর এবং প্রাকৃতির নৈসর্গিক শোভামন্ডিত পরিবেশ, পাইন গাছের সারি, ঝাউ বন, প্রাকৃতিক কাশফুলে ভরা ঘাস প্রকৃতির নৈসর্গিক শোভামন্ডিত পরিবেশ যে কোন পর্যটককেই আকর্ষণ করতে পারে। দর্শনার্থীদের জন্য অন্যতম প্রধান আকর্ষণ চল্লি¬শ দরজা বিশিষ্ট সারিবদ্ধ রেগুলেটর। এছাড়া বাঁধের মূলগোড়া থেকে প্রকল্পে প্রবেশ না করে বেড়িবাঁধ দিয়ে সোজা দক্ষিণে এলেই রয়েছে উপকূলীয় বনবিভাগ কর্তৃক সৃজন করা কৃত্রিম সুন্দরবন। এখানে বনের ফাঁকে ফাঁকে সর্পিল আকারে বয়ে গেছে ছোট ছোট নদী, বনে রয়েছে কৃত্রিম উপায়ে ছাড়া হরিণ, বানরসহ অনেক বন্য পশুপাখি। এখানে পর্যটকদের জন্যে উন্নত সহজ কোন হোটেল রেস্টুরেন্টের ব্যবস্থা নেই। ফাঁকে ফাঁকে বিক্ষিপ্ত কয়েকটি রেস্টুরেন্ট তাই নিজ দায়িত্বেই খাবারের আয়োজনের জন্যে রেগুলেটরের উত্তর পশ্চিমের ছোট বনে রান্না বান্না এবং ভোজের আয়োজন করা যেতে পারে। দক্ষিণ পূর্ব প্রান্তে ২/১ টি অস্থায়ী ভাসমান চা দোকান বসে। এখানে রাত্রীযাপনের কোন সুব্যবস্থা নেই।


শীত মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দলে দলে ভ্রমণ পিপাসু লোক এবং পর্যটক বেড়াতে আসে। প্রাকৃতিক সৌন্দ‌্যর্যে ভরপুর মুহুরী রেগুলেটরের চারদিকে বাঁধ দিয়ে ঘেরা কৃত্রিম জলরাশি, বনায়ন, মাছের অভয়ারণ্য, পাখির কলকাকলি, বাঁধের দুপাশে নীচে খেকে পাথর দিয়ে বাঁধানো এবং উপরদিকে দুর্বা ঘাসের পরিপাটি বিছানা। মুহুরী জলরাশিতে নৌভ্রমণের সময় খুব কাছ থেকে বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস এবং প্রায় ৫০জাতের হাজার হাজার পাখির দেখা পাওয়া যায়।


দেশের যে কোন স্থান থেকে মুহুরী প্রজেক্টের সড়ক যোগাযোগ তথা যাতায়াত ব্যবস্থা যথেষ্ট সুবিধাজনক। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ বাজারের উত্তর পাশ দিয়ে যে রাস্তাটি পশ্চিম দিকে চলে গেছে, সেটিই সহজতর ও একমাত্র রাস্তা জোরারগঞ্জ হতে প্রজেক্ট পর্যন্ত মাত্র আধাকিলোমিটার রাস্তাতেই রয়েছে নিয়মিত বাস, জীপ, টেম্পো বা সিএনজি অটোরিক্সা সার্ভিস। ভাড়া টেক্সী বা ব্যক্তিগত গাড়িতেই ভ্রমণে সুবিধাজনক হয়। একাকী কিংবা দলবদ্ধভাবে মুহুরী প্রজেক্টে ভ্রমণের পরিকল্পনা নেয়া যেতে পারে। জোরারগঞ্জ হতে প্রজেক্ট রোডে আট কিলোমিটার চলার পর প্রকল্পের দীর্ঘ ড্যামের (বাঁধের) পূর্ব প্রান্তে পৌঁছা যাবে। এখান থেকে পায়ে হেঁটে কিংবা গাড়িতে অথবা রিক্সা করে ড্যামের পশ্চিম প্রান্তে সুদৃশ্যময় স্থান রেগুলেটর পর্যন্ত যাওয়া যাবে



কিভাবে যাবেনঃ


সড়ক পথেঃ


ঢাকা থেকেঃ বিআরটিসি এর বাসগুলো ছাড়ে ঢাকা কমলাপুর টার্মিনাল থেকে।আর অন্যান্য এসি, ননএসি বাস গুলো ছাড়ে সায়দাবাদ বাস ষ্টেশন থেকে। আরামদায়ক এবং নির্ভর যোগ্য সার্ভিস গুলো হল এস.আলম ও সৌদিয়া, গ্রীনলাইন, সিল্ক লাইন, সোহাগ, বাগদাদ এক্সপ্রেস, ইউনিক প্রভূতি। সবগুলো বাসই
মিরসরাই এর জোরারগঞ্জ বাজারে থামে। জোরারগঞ্জ বাজারের উত্তর পাশ দিয়ে যে রাস্তাটি পশ্চিম দিকে চলে গেছে, সেটিই সহজতর ও একমাত্র রাস্তা জোরারগঞ্জ হতে প্রজেক্ট পর্যন্ত মাত্র আধাকিলোমিটার রাস্তাতেই রয়েছে নিয়মিত বাস, জীপ, টেম্পো বা সিএনজি অটোরিক্সা সার্ভিস। ভাড়া টেক্সী বা ব্যক্তিগত গাড়িতেই ভ্রমণে সুবিধাজনক হয়। একাকী কিংবা দলবদ্ধভাবে মুহুরী প্রজেক্টে ভ্রমণের পরিকল্পনা নেয়া যেতে পারে। জোরারগঞ্জ হতে প্রজেক্ট রোডে আট কিলোমিটার চলার পর প্রকল্পের দীর্ঘ ড্যামের (বাঁধের) পূর্ব প্রান্তে পৌঁছা যাবে। এখান থেকে পায়ে হেঁটে কিংবা গাড়িতে অথবা রিক্সা করে ড্যামের পশ্চিম প্রান্তে সুদৃশ্যময় স্থান রেগুলেটর পর্যন্ত যাওয়া যাবে


চট্টগ্রাম থেকেঃ ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাওয়ার বাসগুলো অলঙ্কার, কে খান, কর্ণেলহাট বাস ষ্টেশন থেকে ছাড়ে। আর জেলার অভ্যন্তরের বিভিন্ন রুটের বাসগুলো মাদারবাড়ী, কদমতলী বাসষ্টেশন থেকে ছাড়ে। চট্টগ্রাম থেকে জোরারগঞ্জ আসতে হলে জেলার আভ্যন্তরীন রুটের বাস গুলোতে ভ্রমণ করতে হবে।


ফেণী থেকেঃ ফেনী সদর হতে সোনাগাজী উপজেলা সদর পর্যন্ত দূরত্ব ২০ কি.মি. এবং উপজেলা সদর হতে দর্শনীয় স্থান এর দূরত্ব ২০কি.মি. অর্থাৎ ফেনী সদর হতে দর্শনীয় স্থানের দূরত্ব সর্বমোট ৪০কি.মি. । ফেনী সদর বা মহিপাল থেকে বাস বা সিএনজি অটোরিক্সা যোগে মহিপাল গিয়ে সেখান থেকে অটোরিক্সা যোগে মুহুরী প্রজেক্ট যাওয়া যায়। ফেনী রেলওয়ে ষ্টেশন হতে সিএনজি অটোরিক্সা যোগে দর্শনীয় স্থানে যাওয়া যায়।