Thursday, September 1, 2016

মিনি কক্সবাজার

আমাদের দেশের পরিচিত কয়েকটা জায়গা ছাড়া আমরা তেমন কোথাও ঘুরতে যাই না। ইদানীংকালে আমাদের মধ্যে ঘুরে বেড়ানোর প্রতি আগ্রহটা যেভাবে বাড়ছে, সেই হিসেবে নিরাপদে ঘুরে বেড়ানোর
জন্য নতুন জায়গার সন্ধান আমরা পাচ্ছি। ঠিক তেমনি নতুন একটি দর্শনীয় স্থান মৈনট ঘাট।

যাই হোক, আমরা এখন বলতে চাচ্ছি আমাদের মৈনট ঘাটের কথা। যেখানে আপনি আসলে মুগ্ধ হবেন। তাকিয়ে থাকবেন পদ্মা নদীর অপরূপ জলরাশির দিকে। এই বিশাল জলরাশি, পদ্মায় হেলেদুলে ভেসে বেড়ানো জেলেদের নৌকা দেখা আর পদ্মার তীরে হেঁটে বেড়ানো, সব মিলিয়ে কিছুক্ষণের জন্য আপনার মনে হবে আপনি এখন ঢাকার দোহারে নয়, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে আছেন। মূলত এ কারণেই অনেকে মৈনট ঘাটকে বলে থাকেন ছোট কক্সবাজার।

একসময় মৈনট ঘাট থেকে ফরিদপুর যাতায়াতের জন্য আমাদের কার্তিকপুর বাজার থেকে মৈনট ঘাট পর্যন্ত প্রশস্ত রাস্তা তৈরি করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ফেরির প্ল্যানটা বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে এই

রাস্তাটিও অবহেলায়-অযত্নে ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়। অনেকদিন এভাবে থাকার কারণে অপ্রয়োজনে কেউ ওই দিকটায় তেমন একটা পা বাড়াত না। সাম্প্রতি রাস্তাটি পুনরায় মেরামত করার ফলে আবার আসা শুরু করছে মানুষ। এদের বেশির ভাগই আসছে দোহার, নবাবগঞ্জ, শ্রীনগর, কেরানীগঞ্জ থেকে। মৈনট ঘাট এখনো ব্যাপকভাবে পরিচিত না হওয়ার কারণে ভ্রমণপিপাসু অনেক মানুষই বঞ্চিত হচ্ছেন মৈনট ঘাটের সৌন্দর্য উপভোগ করা থেকে।

খুব ভোরে মৈনট ঘাটেই বসে আপনি দেখতে পাবেন সারা রাত পদ্মা নদীতে জেলেদের শিকার করা মাছের বাজার। পদ্মা নদীর সেই নামকরা ইলিশসহ অনেক প্রজাতির মাছই আপনি কিনতে পারবেন এখান থেকে, একদম টাটকা! মৈনট ঘাট দর্শনের উপযুক্ত সময় হচ্ছে বর্ষাকাল। তখন রাস্তার দুই পাশের নিম্নভূমি, যেখানে বর্ষার আগে বিস্তীর্ণ ভূমিজুড়ে বাদামের চাষ করা হয়, আর সবই বর্ষায় পদ্মার
পানিতে তলিয়ে যায়। সে এক দেখার মতো দৃশ্য। বর্ষার আগে এর সৌন্দর্যের কমতি নেই। তখন দেখা যাবে পদ্মা নদীর শান্ত রূপ। একটা সন্ধ্যায় পদ্মা নদীতে সূর্যাস্ত দেখলে পরবর্তী একশোটা সন্ধ্যার কথা মনে থাকবে আপনার। আমাদের প্রধান প্রধান উৎসবের দিনগুলোতে মানুষ এখানে আসছে, ঘুরছে। স্পিডবোট, ট্রলার অথবা খেয়ানৌকা নিয়ে পদ্মার বুকে ভেসে বেড়াচ্ছে অনেকেই।

নবাবগঞ্জ রুটে মৈনট ঘাটে এলে ইচ্ছা করলে পাশাপাশি দেখে যেতে পারবেন নবাবগঞ্জের জজবাড়ি, উকিলবাড়ি, আনসার ক্যাম্প, খেলারাম দাতার বাড়িসহ আরো কিছু দর্শনীয় স্থান। আর মৈনট ঘাটে আরো দেখতে পাবেন পদ্মা নদীর অববাহিকায় গড়ে ওঠা পদ্মাবিধৌত অতিসাধারণ এক জনগোষ্ঠীর জীবনযাপন, যারা শত প্রতিকূলতার মাঝেও পদ্মাকে আগলে ধরে আছে বছরের পর বছর। ঢাকাবাসীরা চাইলে খুব সহজেই দোহারের এই ছোট কক্সবাজার মৈনট ঘাটে একটা ডে ট্রিপ দিতে পারেন

কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকে মৈনট ঘাটে আসার সবচেয়ে সুবিধাজনক উপায়টি হচ্ছে গুলিস্তানের গোলাপ শাহর মাজারের সামনে থেকে সরাসরি মৈনট ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে আসা যমুনা পরিবহনে চেপে বসা দেড়
থেকে আড়াই ঘণ্টার বিনিময়ে আপনি পৌঁছে যাবেন মৈনট ঘাট। ফেরার সময় একই বাসে আবার ঢাকা চলে আসবেন। মৈনট থেকে ঢাকার উদ্দেশে শেষ বাসটি ছেড়ে যায় সন্ধ্যা ৬টায়।

গুলিস্তানের একই স্থান থেকে এন মল্লিক পরিবহনেও আসতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে আপনাকে নামতে হবে নবাবগঞ্জের মাঝিরকান্দা নামক স্থানে। মাঝিরকান্দা থেকে লোকাল অটোতে দোহারের বাঁশতলা। চাইলে লক্ষ্মীপ্রসাদ নামক স্থানে নেমে পোদ্দারবাড়ি নামক পুরোনো বাড়িটিও দেখে নিতে পারেন। আর জজবাড়ি, উকিলবাড়ি, কোকিলপ্যারি দালান, খেলারাম দাতার বাড়ি যাকে স্থানীয়ভাবে আন্ধার কোঠা বলা হয়, এসব দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখতে চাইলে মাঝিরকান্দার আগে কলাকোপা নামক স্থানেই নামতে হবে।

মাঝিরকান্দা থেকে বাঁশতলা আসার পর কার্তিকপুরগামী আরেক লোকাল অটোতে উঠতে হবে। কার্তিকপুর বাজার থেকে আরেক অটোতে মৈনট ঘাট। গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া থেকে নগর পরিবহনেও আসতে পারবেন। নগর পরিবহন নবাবগঞ্জের রুট ব্যবহার করে না। এই বাসটি আসে মুন্সীগঞ্জ হয়ে। এ ক্ষেত্রে আপনাকে কার্তিকপুর বাজারে নামতে হবে। ঢাকার বাবুবাজার ব্রিজ পার হয়ে কদমতলী থেকে সিএনজিতেও আসতে পারবেন। এ ছাড়া যমুনা পরিবহন অথবা এন মল্লিক পরিবহন গুলিস্তানের যে স্থান থেকে ছাড়ে, একই স্থান থেকে জয়পাড়া পরিবহন নামক মিনিবাসটিও ছেড়ে আসে দোহারের জয়পাড়ার উদ্দেশে।

যাঁরা প্রাইভেট কার অথবা বাইক নিয়ে আসতে চাচ্ছেন, তাঁরা এই বাসের রুটটাকে ব্যবহার করতে পারেন। আসতে সুবিধা হবে। এটি বাবুবাজার ব্রিজ পার হয়ে কদমতলী থেকে নবাবগঞ্জের রুট ধরে টিকরপুর-গালিমপুর হয়ে দোহারের প্রাণকেন্দ্র জয়পাড়া পর্যন্ত আসে। আগে এই বাসটি সরাসরি মৈনট ঘাট পর্যন্ত আসত। কয়েক বছর ধরে জয়পাড়ার পর আর আসছে না। 

ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকেও আসার একটা পদ্ধতি আছে। মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধের সিএনজি স্টেশন থেকে আটিবাজার, আটিবাজার থেকে সিএনজি অথবা একপ্রকার ছাদহীন টেম্পোতে কোনাখোলা। কোনাখোলা থেকে দোহার-নবাবগঞ্জগামী যেকোনো একটা বাসে উঠে পড়তে হবে। যারা গাবতলী অথবা সাভারের আশপাশে থাকেন, তারা হেমায়েতপুর থেকে লোকাল সিএনজিতে সরাসরি নবাবগঞ্জ আসতে পারবেন। অথবা সরাসরি সিএনজি না পেলে হেমায়েতপুর থেকে হযরতপুর, হযরতপুর থেকে পারাগ্রাম, নৌকায় নদী পার হয়ে আরেক সিএনজিতে নবাবগঞ্জ সদর।

মৈনট ঘাটকোথায় থাকবেন:
ট্যুরিস্টদের থাকার জন্য মৈনট ঘাটের আশপাশে কোনো হোটেল, রিসোর্ট, বোর্ডিং এখনো তৈরি করা হয়নি। স্থানীয় কোনো বাসিন্দার বাড়ি ম্যানেজ করতে না পারলে দিনে এসে দিনেই ফিরে যাওয়া ভালো।

কোথায় খাবেন:
বেশির ভাগ মানুষেরই ইচ্ছা থাকে পদ্মার তীরে বসে পদ্মার সেই নামকরা ইলিশ খাওয়ার। মৈনট ঘাটে দুটি ভাতের হোটেল আছে। একটি আতাহার চৌধুরীর হোটেল অপরটি জুলহাস ভূঁইয়ার হোটেল।
নিরঞ্জন মিষ্টান্নভাণ্ডার, মুসলিম সুইটস, রণজিৎ মিষ্টান্নভাণ্ডারসহ আরো কিছু মিষ্টির দোকান আছে এখানে।