মিনি বাংলাদেশ
শিরোনাম দেখে কারও কারও মনে ধারণা আসতেই পারে, ১,৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটারের এই দেশটি ছোট্ট বলে
হয়তো একে সংক্ষেপে মিনি বাংলাদেশ বলা হচ্ছে। কিন্তু আসলে তা নয়। বন্দরনগরী
চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে অবস্থিত বর্তমান স্বাধীনতা কমপ্লেক্সের কথাই বলছি। যা
যাত্রা শুরুর পর শহীদ জিয়া স্মৃতি কমপ্লেক্স নামে যাত্রা শুরুর পর থেকেই ‘মিনি বাংলাদেশ’ নামে সবার কাছে পরিচিত হয়ে ওঠে।
খুব অল্প সময়ের মধ্যেই চট্টগ্রামসহ সারা দেশের মানুষের কাছে অন্যরকম এক আকর্ষণে
পরিণত হয় থিম পার্কের আদলে গড়া এই কমপ্লেক্সটি। এটিতে রয়েছে গোটা বাংলাদেশের
ঐতিহাসিক স্থানগুলোর অবিকল নিদর্শন। চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না আহসান
মঞ্জিল, সংসদ ভবন, কার্জন হল
কিংবা কান্তজির মন্দির কী করে চট্টগ্রামে চলে এলো!
যারা সমগ্র বাংলাদেশে ঘুরেননি বা ঘুরার সময় পাননি তাঁরা
একনজরে দেখে নিতে পারবেন বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সব স্থাপনা। বাংলাদেশের বিভিন্ন
অঞ্চলের ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো একসাথে দেখার মজাটাই আলেদা। একবার চোখ বন্ধ করে
ভাবুন তো এক জাদুময় স্থানে এসে উপস্থিত আপনি। যেখানে জাদুর বদৌলতে এক টুকরো
বাংলাদেশ আপনার সামনে উঠে এসেছে। চোখ মেলতেই দেখলেন ওই তো লেকসহ সগৌরবে দাঁড়িয়ে
জাতীয় সংসদ ভবন, তার কিছুটা সামনেই জাতীয় স্মৃতিসৌধ আর এর পাশ ঘেঁষে ইতিহাসের সাক্ষী
হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কার্জন হল।
কি নেই এখানে? এক কথায় বলতে গেলে গোটা বাংলাদেশেই
রয়েছে এর মধ্যে। অর্থাৎ, ঐতিহাসিক স্থানগুলোর অবিকল
নিদর্শন। চোখে না দেখলে বিশ্বাস করার মতো না এমন সব কাজ। মিনি বাংলাদেশে গেলে সবাই
অবাক হবেন এই ভেবে যে, আরে কোথায় এলাম। আহসান মঞ্জিল,
সংসদ ভবন, কার্জন হল কিংবা কান্তজির
মন্দির কী করে চট্টগ্রামে চলে এলো! এখানেই কিন্তু শেষ নয়, এর পাশে নবাবী আমলের হাল-হকিকতে বহাল তবিয়তে দাঁড়ানো দরবার হল,
সোনা মসজিদ, সেন্ট নিকোলাস চার্চ,
বড় কুঠি, ছোট কুঠি, লালবাগ কেল্লা, পাহাড়পুর, সুপ্রিম কোর্ট আর জাতীয় শহীদ মিনার।
স্বপ্ন কল্পনার এরকম জাদুবাস্ততা অবস্থিত নগরীর এই
পার্কে। বর্তমানে ‘স্বাধীনতা কমপ্লেক্স’ নামে সিটি করপোরেশনের
তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই কমপ্লেক্সটির শুরুর দিকের নাম ছিল 'শহীদ জিয়া স্মৃতি কমপ্লেক্স'। কালুরঘাট
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র সংলগ্ন বিশাল জায়গাজুড়ে প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে
শহীদ জিয়া স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের নাগরিক
ব্যস্ততার ফাঁক গলে প্রশান্তির জন্য প্রতিদিন
এখানে এসে অনেক মানুষ-ই একটু স্বস্থি খোঁজেন।
ফ’য়স লেক, শিশুপার্কসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে জিয়া স্মৃতি
কমপ্লেক্স যোগ হওয়ার পর দর্শনার্থীরা একে খুব সহজেই গ্রহণ করেছে। বিশেষত গোটা
বাংলাদেশের বিখ্যাত স্থাপত্যকর্মগুলোর সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য এটি সত্যি এক
অসাধারণ উদ্যোগ। ফলে অল্প দিনেই দেশজুড়ে খ্যাতি লাভ করে কমপ্লেক্সটি।
স্বপ্ন কল্পনার এরকম জাদুবাস্ততা অবস্থিত চট্টগ্রামের
বহদ্দারহাটে। এখানে বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের দর্শনীয় স্থাপনাগুলো ছাড়াও
রয়েছে সুউচ্চ রিভলভিং রেস্টুরেন্ট বা ঘূর্ণায়মান হোটেল ও নানা ধরনের
এমিউজমেন্ট রাইড। নতুন প্রজন্মের কাছে সংক্ষেপে গোটা বাংলাদেশকে পরিচিত করে তোলার
জন্য এটি সত্যি এক অসাধারণ আয়োজন। পার্কটি সপ্তাহের সাত দিনই খোলা থাকে। প্রতিদিন
বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত নানা বয়সী দর্শনার্থীর ভিড়ে মুখর থাকে পার্কটি। এতটুকু
প্রশান্তি আর এক মুহূর্তে গোটা বাংলাদেশকে দেখে নেওয়ার জন্য আপনিও ঘুরে আসতে
পারেন অন্যরকম ‘মিনি বাংলাদেশ’ থেকে।
কিভাবে
যাবেনঃ
সড়ক পথেঃ
ঢাকা
থেকেঃ বিআরটিসি এর বাসগুলো ছাড়ে ঢাকা কমলাপুর টার্মিনাল থেকে
চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছাড়ে, আর অন্যান্য এসি, ননএসি বাস গুলো ছাড়ে
সায়দাবাদ বাস ষ্টেশন থেকে। আরামদায়ক এবং নির্ভর যোগ্য সার্ভিস গুলো হল এস.আলম ও
সৌদিয়া, গ্রীনলাইন, সিল্ক লাইন, সোহাগ, বাগদাদ এক্সপ্রেস, ইউনিক প্রভূতি। চট্টগ্রাম
শহরের বহদ্দারহাট নামক স্থানে অবস্থিত মিনি
বাংলাদেশ।
অন্য শহর থেকেঃ দেশের প্রায় সব কয়টি জেলার সাথে
চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগ রয়েছে। আপনি আপনার শহর থেকে নিজের পছন্দ মত বাসে এসে
চট্টগ্রাম শহরে এ কে খানে নামবেন এবং সেখান থেকে সি এন জি বা শহর এলাকার বাস যোগে
চলে যাবেন মিনি বাংলাদেশ।
নদী পথেঃ
বরিশাল, খুলনা পটুয়াখালী ইত্যাদি জেলার সাথে
চট্টগ্রামের রয়েছে লঞ্চ/ইস্টিমার সার্ভিস। সুতরাং আপনি নদী পথে ও চট্টগ্রাম আসতে
পারেন।
রেলওয়েঃ
ঢাকা থেকে আশুগঞ্জ, ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আখাউড়া,
কুলিল্লা, চান্দপুর, ফেনী হয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ট্রেন সার্ভিস রয়েছে।
তাছাড়া সিলেট থেকে ও ট্রেন সার্ভিস রয়েছে।