হজরত বায়েজিদ বোস্তামী (রঃ) ৮০৪ খ্রীষ্টাব্দে ইরানের
বোস্তাম শহরে জন্ম গ্রহণ করেন এক ধার্মিক পরিবারে। আগেকার দিনে কিছু কিছু দেশে
নামের শেষে জন্ম গ্রহণকারী অঞ্চলের নাম জুড়ে দেওয়ার রীতি বেশ প্রচলিত ছিল। তারি
ধারাবাহিকতায় তাঁর নামের শেষে বসে যায় বোস্তামী শব্দটি। বোস্তামী মানে- বোস্তাম
শহরের বাসিন্দা। পিতা মাতার দেওয়া তাঁর নাম ছিল আবু ইয়াজিদ বিস্তামী। তাঁর পিতার
নাম ছিল তয়ফুর। বাবার নামানুসারে আবার কেউ কেউ তাঁকে ডাকেন তায়ফুর আবু ইয়াজিদ
আল্ বোস্তামী নামে।
বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার চট্টগ্রাম এর নাসিরাবাদের
একটি পাহাড়ের উপরে অবস্থিত। সমাধি পাহাড়ের পাদদেশে একটি তিন গম্বুজ বিশিষ্ঠ
মোঘলরীতির আয়তাকার মসজিদ এবং একটি বিশালাকার দীঘি আছে। মিথ প্রচলিত আছে বায়েজিদ বোস্তামী
নিজে এসব কচ্ছপ চট্টগ্রামে নিয়ে এসেছিলেন।আবার কেউ কেউ বিশ্বাস করেন বায়েজিদ
দুষ্ট জ্বীনদের কচ্ছপ বানিয়ে বন্ধী করে রেখেছেন। স্থাপত্যশৈলী থেকে ধারণা করা হয়
মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব এর আমলে মসজিদটি নির্মিত। হযরত বায়েজিদের দাদা একজন পার্সী
ধমাবলম্বী ছিলেন,
যিনি পরবর্তীতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।বায়েজিদ ১ম বার মক্কা
গিয়ে শুন্য ঘর ও কিছু পাথর ছাড়া কিছুই দেখতে পেলেন না। ভাবলেন হয়তো ঈশ্বর তাঁর
তীর্থভ্রমণ গ্রহণ করেন নি। তাই দেখা দেন নি। ২য় বার আবার গেলেন সেখানে, ঐ ঘর আবার দেখতে পেলেন এবং সেই সাথে ঐ ঘরের প্রভুকে দেখতে পাওয়ার দাবি
জানালেন।
সুফী সাধক ও আউলিয়াগণ চট্টগ্রামে ইসলাম ধর্ম প্রচারের
সময় সচরাচর পাহাড় এর উপরে কিংবা জঙ্গল ঘেরা অঞ্চলে আবাস স্থাপন করেন এবং এসব
জায়গাতে মাজার কিংবা এই ধরণের বিভিন্ন স্থাপনা প্রতিষ্ঠা করেন। বেশি ভাগ সময়ই
তিনি নিজ বাড়ির নিভৃতে অথবা মসজিতে কাটিয়েছেন। নিভৃতচারী হওয়া সত্ত্বেও সূফী জগৎ
থেকে তিনি কখনোই আলাদা থাকেননি। সূফীবাদের আলোচনা করার জন্য তিনি লোকজনকে নিজের
বাড়িতে আমন্ত্রন করতেন।তাঁর বাবা ছিলেন এক জন সুফি সাধক, মাও ছিলেন ধর্মপ্রাণ
মহিলা। চট্টগ্রামে বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার এখানে প্রকৃত অর্থেই কোন মাজার নেই। বায়েজিদ
বোস্তামীতে একটা পুকুর আছে।
বায়েজিদ বোস্তামীর মাজারের পাদদেশে একটি সুবিশাল দীঘি
অবস্থিত। শত বছর ধরে ধারণা ছিল, ‘বোস্তামী কাছিম’ শুধু
চট্টগ্রামে বায়েজিদ বোস্তামী (র.)-এর মাজারের পুকুরে পাওয়া যায়। মাজারের
দেখাশোনার দ্বায়িত্বে থাকা মাজার তত্বাবধায়ক কমিটির লোকদের দ্বারাই এদের প্রতিপালন
করা হয়। বর্তমানে মাজার প্রাঙ্গন সংলগ্ন এই দীঘিতে দেড়শো থেকে সাড়ে তিনশো
কচ্ছপের আবাস রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। প্রজনন মৌসুমে মাজারের মূল পাহাড়ের পেছনে
এদের জন্য সংরক্ষিত স্থানে এদের ডিম পাড়ার ব্যবস্থা করা হয়।
এ কচ্ছপের বৈজ্ঞানিক নাম হল অ্যাসপিডেরিটিস
নাইগ্রিক্যান্স। প্রাণিবিজ্ঞানী অ্যান্ডারসন ১৮৭৫ সালে সর্বপ্রথম ভারতের জাদুঘরে
রক্ষিত দুটি নমুনা থেকে বোস্তামীর কচ্ছপের প্রজাতিটির সন্ধান পান। রক্ষিত নমুনা
দুটি ছিল চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী পুকুর থেকে সংগৃহীত। ১৯১২ সালে
প্রাণিবিজ্ঞানী এন এনানডেলের মতে বোস্তামীর কচ্ছপ একসময় ব্রহ্মপুত্র নদের
অববাহিকা থেকে মিয়ানমার পর্যন্ত বিশাল এলাকাজুড়ে বিচরণ করত। এই পুকুরে কচ্ছপ
গুলো কিভাবে এল এতদিন পরে তা জানার কোন উপায় নেই আজ। তবে যেভাবে আসুক না কেন
মাজারের এই পুকুরে শত শত বছর ধরে বাস করা কাচ্ছপগুলো বিশ্বে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে
যাওয়া প্রজাতির তা নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। এই প্রজাতির কচ্ছপ এতই দূর্লভ
১৯১৪ সালে প্রাণিবিজ্ঞানী এন এনানডেলের ও অন্য প্রাণিবিজ্ঞানী এম শাস্ত্রী এক গবেষণায়
উল্লেখ করেন বোস্তামীর কচ্ছপ বর্তমানে শুধু চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী মাজার
সংলগ্ন পুকুরেই টিকে আছে। পৃথিবীর কোথাও এই প্রজাতির কচ্ছপ আর দেখা যায় না। ২০০২
সালে পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক সংস্থা, আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও
প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (IUCN) কর্তৃক বোস্তামী
কচ্ছপ কে চরমভাবে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়। তাই এই
কচ্ছপেরর ওপর ২০০৭ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফি চ্যানেল এক ডকুমেন্টারি তৈরি করে নিয়ে
যায়। এগুলোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য- আকারে এই কচ্ছপ অনেক বড় হয় এবং ওজনও নাকি বেশি
হয়। কালের সাক্ষ্যি হয়ে শত শত বছর এদের বেঁচে থাকার অপূর্ব ক্ষমতা আছে। মিথ
প্রচলিত আছে বায়েজিদ বোস্তামী নিজে এসব কচ্ছপ চট্টগ্রামে নিয়ে এসেছিলেন।আবার কেউ
কেউ বিশ্বাস করেন বায়েজিদ দুষ্ট জ্বীনদের কচ্ছপ বানিয়ে বন্ধী করে রেখেছেন।
দুঃখজনক খবর জীব বৈচিত্রের নিদর্শন নিরীহ এই
কচ্ছপগুলোকে ২০০৪ সালের মে মাসে একবার পুকুরে বিষ ঢেলে এদের বংশ র্নিবংশ করার
চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু জাতীয় বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ
চট্টগ্রামের ত্বরিত পদক্ষেপে কোনমতে রক্ষা পেয়ে যায় কচ্ছপ গুলো।
অষ্টাদশ শতাব্দীর চট্টগ্রামের কিছু কবির কবিতার উল্লেখ
করা হয় যেখানে শাহ সুলতান নামক একজন মনীষির নাম বর্ণিত আছে। বায়েজীদ বোস্তামীকে
যেহেতু সুলতান উল আরেফীন হিসাবে আখ্যায়িত করা হয় যেই সূত্রে এই শাহ সুলতান আর সুলতান
উল আরেফীন কে একই ব্যক্তি হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।ছোটবেলায় তাঁর বেশিরভাগ সময়
নাকি কাটত ঘর থেকে মসজিদ আর মসজিদ থেকে ঘরে যাওয়া আসা করেই। তাঁর জ্ঞান বুদ্ধি
তাতে কতটুকু বিকশিত হয়েছিল তা নিয়ে ঘোর সংশয় সৃষ্টি হয় কবি কালিদাস রায়ের ‘মাতৃভক্তি’
কবিতাটি পড়লেই।
একদিন বায়েজিদ বোস্তামীর মা গভীর রাতে হঠাৎ ঘুম থেকে
জেগে পানি খেতে চাইলেন। বালক বায়েজিদ পানি আনতে গিয়ে দেখলেন কলসিতে পানি নেই।
অতগ্য তিনি রাত দুপুরে বহু দুরের ঝর্ণা হতে পানি নিয়ে এসে দেখলেন মা আবারো
ঘুমিয়ে পড়েছেন। কিন্তু তিনি মায়ের ঘুম না ভাঙ্গিয়ে সারারাত পানির গ্লাস হাতে মায়ের
শিয়রের কাছে দাঁড়িয়ে প্রতিক্ষায় রইলেন মায়ের ঘুম ভাঙ্গার? এক সময়
রাত কেটে সকাল হল। মা জেগে দেখলেন বায়েজিদ তখনো দাঁড়িয়ে আছে গ্লাসে পানি নিয়ে।
মায়ের প্রতি এই ভক্তি দেখে মা আবেগ তাড়িত হয়ে কেঁদে ফেলেন । এ ঘটনার পর কান্না
ভেজা চোখে মা সেদিন বায়েজিদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন। আর মায়ের দোয়ার বরকতে
হযরত বায়েজিদ বড় হয়ে বিশ্ব বিখ্যাত আউলিয়াদের একজন হয়ে গেলেন।
বাংলাদেশে মাজার নিয়ে সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহর 'লাল সালু' উপন্যাস এবং আরো বেশ কয়েকটি মুখরোচক
গল্প প্রচলিত আছে। বোস্তামির মাজারে কচ্চপ সমূহকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় ‘মাজারী ও গজারী’ কচ্চপ বললে নাকি গুনাহ! হয়।
অনেক অজ্ঞ মানুষ নিয়্যত করে, ছেলে-মেয়ে জন্মিলে ওদের হাত
দিয়ে মাজারী ও গজারীকে খাবার খাওয়াবে। পেটে বাচ্চা হওয়ার জন্য মাজারী ও গজারীর
পীটের কাদা নিয়ে পেটে মাখবে, কাদা গুলি বাচ্চার
শরীরে-মুখে মাখবে, বিভিন্ন রোগ মুক্তির আশায় ওদের পীঠের
ওপর জমে থাকা কাদা খাওয়ার মত জঘন্য কাজ ও করা হয়। দাড়ি-টুপী-পাগড়ী ওয়ালা দালাল সাথে
সাথেই ঘুর ঘুর করছে। উপরে নিয়ে গিয়ে মাজারের মশারীর উপর কোন মনোস্কামনা পূরনের
নিয়্যত করে টাকা ঢালতে বলবে। তার পর বলবে দানবাক্সে ঢালতে। বাক্সেরগুলি পরে ভাগ
বাটোয়ারা হবে। মশারীর উপর যা ঢালা হল তা ঐ চোর নগদ হাতিয়ে নেবে। তার পর নিয়ে যাবে
মাজার আঙ্গিনায় বেড়ে ওঠা গাছ গাছালির নিকট। চিরকুটে বিভিন্ন আর্জি লিখে গাছের সাথে
ঝুলিয়ে দেয়া হয়। আরো অনেক তামাশা।
বাংলাদেশে মাজার নিয়ে সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহর 'লাল সালু' উপন্যাস এবং আরো বেশ কয়েকটি মুখরোচক গল্প প্রচলিত আছে। বোস্তামির মাজারে কচ্চপ সমূহকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় ‘মাজারী ও গজারী’ কচ্চপ বললে নাকি গুনাহ! হয়। অনেক অজ্ঞ মানুষ নিয়্যত করে, ছেলে-মেয়ে জন্মিলে ওদের হাত দিয়ে মাজারী ও গজারীকে খাবার খাওয়াবে। পেটে বাচ্চা হওয়ার জন্য মাজারী ও গজারীর পীটের কাদা নিয়ে পেটে মাখবে, কাদা গুলি বাচ্চার শরীরে-মুখে মাখবে, বিভিন্ন রোগ মুক্তির আশায় ওদের পীঠের ওপর জমে থাকা কাদা খাওয়ার মত জঘন্য কাজ ও করা হয়। দাড়ি-টুপী-পাগড়ী ওয়ালা দালাল সাথে সাথেই ঘুর ঘুর করছে। উপরে নিয়ে গিয়ে মাজারের মশারীর উপর কোন মনোস্কামনা পূরনের নিয়্যত করে টাকা ঢালতে বলবে। তার পর বলবে দানবাক্সে ঢালতে। বাক্সেরগুলি পরে ভাগ বাটোয়ারা হবে। মশারীর উপর যা ঢালা হল তা ঐ চোর নগদ হাতিয়ে নেবে। তার পর নিয়ে যাবে মাজার আঙ্গিনায় বেড়ে ওঠা গাছ গাছালির নিকট। চিরকুটে বিভিন্ন আর্জি লিখে গাছের সাথে ঝুলিয়ে দেয়া হয়। আরো অনেক তামাশা।