Sunday, March 10, 2013

চট্টগ্রাম – অপরূপ সাগর সঙ্গম পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত

মৌন পাহাড়রাজি, সাগরের কল্লোল, কর্ণফুলীর কলতান হাজার বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিপুল বৈভব নিয়ে চট্টগ্রাম। এ নগরে বন্দরের আকর্ষণে ছুটে এসেছে এশিয়া-ইউরোপ-আফ্রিকার নাবিকরা, এসেছে ভ্রমণপিপাসু পর্যটক, অনেকে বাঁধা পড়েছে এখানকার জীবন ও জীবিকার সাথে, ঘর বেঁধেছে। বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের মানুষের ভাষা, সংস্কৃতি জীবনাচার নগরজীবনকে ঐশ্বর্য দিয়েছে, বিচিত্র সংস্কৃতির উদ্ভাসন চট্টগ্রামের পরিচিতিকে পৃথক মর্যাদা দিয়েছে। পর্যটন নগরী হিসেবেও রয়েছে চট্টগ্রামের আলাদা ঐতিহ্য। 

 

ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে চট্টগ্রাম নগরীর পছন্দের জায়গা হচ্ছে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। উৎসব, পার্বণ কিংবা ছুটির দিন ছাড়াও চট্টগ্রামে ঘুরতে এলে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে যাওয়ার আগ্রহ দেখান না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। চট্টগ্রাম শহরের জিরু পয়েন্ট থেকে ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত একটি সমূদ্র সৈকত। নান্দনিক প্রাকৃতিক সম্পদে ভরা বন্দর নগরী চট্টগ্রাম। 

দুইপাশে পাহাড়, একপাশে নদী, অন্যপাশে সাগর। কর্ণফুলীর মোহনা, পৃথিবীর সুন্দরতম এক নদীর মোহনা। এপাড় বিমানবন্দর আর নেভাল ওপাড়ে দেয়াং পাহাড়, মরিয়ম আশ্রম আর মেরিন একাডেমী। মোহনা থেকে শুরু করে উজানে ১০ কিমি বন্দরের জেটি। ভ্রমণপিপাসুরা শুনতে পাবেন সাগরের কল্লোল, দেখবেন নীল জলরাশির অপার ঢেউ।

বিশ্বের নানাদেশের নানা পতাকাবাহী নোঙর করা সারি সারি জাহাজ, নয়নাভিরাম দৃশ্যের সৃষ্টি করে। পর্যটক যিনিই আসেন, অবাক বিষ্ময়ে তাকিয়ে থাকেন। পৃথিবীতে এরকম সৌন্দর্যে ভরপুর দ্বিতীয় কোন নদীর মোহনা সত্যিই বিরল। এই বিরল নদীর মোহনার (১৮নং নামেই পরিচিত) অদুরে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। দিগন্ত বিস্তৃত সমুদ্রের সফেদ জলরাশি আর সাগরপাড়ে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের মাতম আনমনা করে তোলে এখানে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীদের।

কখনো কি সাগর সঙ্গম দেখেছেন? না দেখলে তাড়াতাড়ি পতেঙ্গা চলে আসুন। এমন বিরল দৃশ্য খুব কমই দেখা যায়। কর্ণফুলি নদী আর বঙ্গোপসাগর যেখানে মিশেছে সেখানে তাকালে পানির পার্থক্য স্পষ্ট চোখে পড়ে। সত্যিকারের সাগর সঙ্গম কি তা এ দৃশ্য স্বচক্ষে না দেখলে কখনোই বোঝা যাবে না। রাতের বেলা নেভাল একাডেমী সংলগ্ন কর্ণফুলী পাড়ের নেভাল বিচ থেকে কর্ণফুলীএবং বঙ্গোপসাগরের মিলন কেন্দ্র মোহনার সৌন্দর্য উপভোগের মজাই আলাদা। মধ্যরাত পর্যন্ত পর্যটকের কোলাহলে মুখরিত থাকে নেভাল বিচ।

কাঠগড় বাজার থেকে কিছুটা এগিয়ে গেলেই সমুদ্র সৈকতে যাবার সুন্দর ঝাউগাছ ঘেরা রাস্তা। সমুদ্র সৈকত এলাকায় বন্যার হাত থেকে আশপাশের এলাকা রক্ষার জন্য ছয়-সাত বছর আগে এখানে নির্মান হয়েছিল ভেড়িবাঁধ। বাঁধ রক্ষার জন্য সিমেন্টের জমানো বড় বড় স্লাপ এবড়ো থেবড়োভাবে ফেলে রাখা হয়েছে। বেড়িবাঁধের ঢালু পাড়ে লাগানো সবুজ ঘাস ভ্রমনার্থীদের বসার সুবিধার কারণ হয়ে উঠেছে।

 

 বাঁধ পেরিয়ে সমুদ্রের বালুকা বেলায় ডেকোরেশনের টেবিল ও চেয়ার পেতে খাবার হোটেল, শামুক-ঝিনুকের সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেছে প্রায় ৪৩৬ টি দোকান। ছুটির দিনগুলোতে প্রচন্ড ভিড়ে মানুষেরা ঘুরে বেরিয়ে, কেনাকাটা করে সময় কাটাতে দেখা যায় বিশেষ করে এ পর্যটন মৌসুমে। বিকেলে সমুদ্র সৈকতের সুর্যাস্ত দেখার জন্য আসা নারী-পুরুষ, তরুন-তরুনী, শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সকল বয়সের মানুষ আনন্দ নিয়ে ঘরে ফিরে যায়।

 

সন্ধ্যার কর্ণফুলী নদীর পূর্ব পাড়ে কাফকো ও ইউরিয়া সার কারখানা লাল নীল বাতি দেখতে প্রাইভেট কার, মাইক্রো নিয়ে ছুটে আসে হাজার হাজার মানুষ। বিশেষ করে যুগলদের মিলন মেলা বসে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত।

সন্ধ্যায় নেভালের রাস্তার বিপরীত পাশে দোকান গুলো ছোট ছোট পেয়াজু ও কাকড়া বাজি খেতে খেতে সন্ধ্যার পরিবেশটা উপভোগ, যে একবার করবে তাকে আরেক বার আসতেই হবে। রাতে জাহাজ বা নৌকায় নদীর মাঝে বা সমুদ্রের মাঝে গিয়ে চাঁদে আলোর পরিবেশটা ভূলারমত নয়। হালকা মৃদু বাতাস চার দিকে সবই সাদা। চাঁদের আলো যেন একমাত্র নিজের জন্যই।

যান্ত্রিক এ বাণিজ্যিক নগরীতে এখন প্রজাপতি নামের প্রাণীটা যেন হারিয়ে গেছে। কত রং প্রজাতির যে প্রজাপতি রয়েছে তা অনেকেই জানে না। তাই তো বিভিন্ন প্রজাপতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া গুরু দায়িত্ব নিয়েছে বাট্টার ফ্লাই পার্ক। পার্কটি পতেঙ্গা থানার নেভাল একাডেমী থেকে শাহ্ আমানত বিমান বন্দর গামী রাস্তার মুখে অবস্থিত পার্কটিতে গিয়ে বিভিন্ন প্রজাতি ও বিভিন্ন রং এর প্রজাপতির সাথে সহজে পরিচিত হওয়া যায়। প্রজাপতি গুলো যেমন দেখতে অপরূপ সুন্দর, নামও তেমনি সুন্দর। বিমান বন্দর যেতে একটি বড় জায়গার একটি অংশে বিভিন্ন ধরনের বনৌজি, ঔষধি ও ফলাধি গাছ লাগানো এখানে আপনি বনজ ও ঔষধী গাছের সাথে পরিচিত হতে পারবেন।

 

কিভাবে যাবেনঃ 

 

সড়ক পথেঃ

ঢাকা থেকেঃ বিআরটিসি এর বাসগুলো ছাড়ে ঢাকা কমলাপুর টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছাড়ে, আর অন্যান্য এসি, ননএসি বাস গুলো ছাড়ে সায়দাবাদ বাস ষ্টেশন থেকে। আরামদায়ক এবং নির্ভর যোগ্য সার্ভিস গুলো হল এস.আলম ও সৌদিয়া, গ্রীনলাইন, সিল্ক লাইন, সোহাগ, বাগদাদ এক্সপ্রেস, ইউনিক প্রভূতি। চট্টগ্রাম শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে ১০ কিমি দূরে অবস্থিত অপরূপা পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত

অন্য শহর থেকেঃ দেশের প্রায় সব কয়টি জেলার সাথে চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগ রয়েছে। আপনি আপনার শহর থেকে নিজের পছন্দ মত বাসে এসে চট্টগ্রাম শহরে এ কে খানে নামবেন এবং সেখান থেকে সি এন জি বা শহর এলাকার বাস যোগে চলে যাবেন পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। 

 

নদী পথেঃ

বরিশাল, খুলনা পটুয়াখালী ইত্যাদি জেলার সাথে চট্টগ্রামের রয়েছে লঞ্চ/ইস্টিমার সার্ভিস। সুতরাং আপনি নদী পথে ও চট্টগ্রাম আসতে পারেন। 

 

রেলওয়েঃ

ঢাকা থেকে আশুগঞ্জ, ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আখাউড়া, কুলিল্লা, চান্দপুর, ফেনী হয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ট্রেন সার্ভিস রয়েছে। তাছাড়া সিলেট থেকে ও ট্রেন সার্ভিস রয়েছে।