চট্টগ্রাম - সীতাকুন্ড চন্দ্রনাথ পাহাড়
সীতাকুণ্ড অপরূপ
প্রাকৃতিক সৌর্ন্দয্যের লীলাভূমি ।এ এলাকা শুধু হিন্দুদের বড় তীর্থস্থানই নয় খুব
ভাল ভ্রমনের স্থানও বটে।সীতাকুণ্ডের পূর্বদিকে চন্দ্রনাথ পাহাড় আর পশ্চিমে
সুবিশাল সমুদ্র ।যে সকল ভ্রমনকারী প্রকৃতিকে ভালবাসেন প্রকৃতিকে খুব কাছের থেকে
উপভোগ করতে চান তারা অবশ্যই সীতাকুণ্ডে আসতে হবে।
চট্টগ্রাম
শহর থেকে প্রায় ৩৮ কি মিঃ উত্তরে এবং সীতাকুণ্ড বাজার থেকে ৪কি.মি. পূর্বে চন্দ্রনাথ পাহাড়
অবস্থিত ।আপনি পায়ে হেঁটে অথবা রিক্সায় চড়ে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যেতে
পারেন।কিন্তু পায়ে হেঁটে ভ্রমনের মজাই আলাদা, কারন চন্দ্রনাথ পাহাড় শ্রেণীভূক্ত
ছোট পাহাড় গুলো ব্যাসকুণ্ড থেকে শুরু হয়েছে।চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যাবার পথে
হিন্দুদের কিছু ধর্মীয় স্থাপনাও আপনার চোখে পরবে।এই এলাকা বিভিন্ন ধরনের গাছ,
বুনফুল এবং গুল্মলতায় পরিপূর্ণ।বোটানি এবং জীববিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা
তাদের শিক্ষা প্রকল্পের কাজের জন্য প্রায়ই এখানে আসেন।
এখানে আপনি
পেয়ারা,সুঁপাড়ি, আম সহ বিভিন্ন ফলের বাগান দেখতে পাবেন।এখানে কিছু নৃতাত্বিক
জনগোষ্ঠীর মানুষও বসবাস করে, যারা ত্রিপুরা নামে পরিচিত এবং এখানে তাদের কিছু
গ্রামও আছে।আপনি যদি পাহাড়ের গভীরে যান তবে পাহাড়ের গায়ে ফসলের চাষ হচ্ছে দেখতে
পাবেন, এ গুলোকে জুমক্ষেত বলে; গভীর পাহাড়ের ভেতরে আপনি বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করা
ফুলের বাগানও দেখতে পাবেন।
এখানে অনেকগুলো ঝর্ণা আছে তবে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যাবার
পথে আপনারা শুধু একটি মাত্র ঝর্ণা দেখতে পারবেন, এস্থান থেকেই পাহাড়ে উঠার পথ দু
ভাগে বিভক্ত হয়েগেছে, ডানদিকের দিকের রাস্তা প্রায় পুরোটাই সিঁড়ি আর বামদিকের
রাস্তাটি পুরোটাই পাহাড়ী পথ কিছু ভাঙ্গা সিঁড়ি আছে।বাম দিকের পথ দিয়ে উঠা সহজ
আর ডানদিকের সিঁড়ির পথদিয়ে নামা সহজ, তবে আপনি আপনার ইচ্ছা অনুযায়ী পথ ব্যবহার
করতে পারবেন।এখানে সীতা মন্দিরের কাছে আরও একটি ঝর্ণা আছে তবে এটা শুকিয়ে গেছে,
অন্য ঝর্ণা গুলো গভীর বনের মধ্যে অবস্থিত। বর্ষাকালে বৃষ্টিতে ধুয়ে গাছের পাতা
যখন পরিষ্কার, সতেজ হয়ে যায় তখন দেখতে খুবই সুন্দর লাগে তখন পাহাড়গুলোকে দেখতে
পূর্ণ যৌবনা মনে হয়।কিন্তু বর্ষাকালে পাহাড়ে উঠা খুবই বিপদজনক।
কথিত আছে নেপালের
একজন রাজা স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে বিশ্বের পাঁচ কোনে পাঁচটি শিবমন্দির নির্মান করেন।
এগুলো হলো নেপালের পশুপতিনাথ, কাশিতে বিশ্বনাথ, পাকিস্তানে ভুতনাথ, মহেশখালীর
আদিনাথ আর সীতাকুন্ডে চন্দ্রনাথ।
প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ ও
ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায় প্রাচীন কালে এখানে মহামুনি ভার্গব বসবাস করতেন।অযোদ্ধার
রাজা দশরথের পুত্র রামচন্দ্র তার বনবাসের সময় এখানে এসেছিলেন।মহামুণি ভার্গব
তাঁরা আসবেন জানতে পেরে তাঁদের স্নানের জন্য তিনটি কুণ্ড সৃষ্টি করেন এবং
রামচন্দ্রের এখানে ভ্রমণ কালে তাঁর স্ত্রী সীতা এই কুণ্ডে স্নান করেন।এই কারনেই
এখানকার নাম সীতাকুণ্ড বলে অনেকে ধারনা করেন।
চন্দ্রনাথ মন্দির
ছাড়াও এখানে শীব মন্দির, সীতার মন্দির সহ ছোট বড় অনেক মন্দির
রয়েছে। সীতার মন্দিরের কাছে মৃতপ্রায় একটি ঝর্না রয়েছে। তবে আপনি যদি
ঝর্নার পানিতে গোসল করতে চান তাহলে আপনাকে পাহাড়ের গভীর বনের মধ্যে যেতে হবে।
গ্রীষ্মকালে এই পাহাড় রুক্ষ্ম থাকলেও বর্ষাকালে বৃষ্টিস্নাত হয়ে পাহাড়ের গাছ, লতা,
পাতা সবকিছু ধুয়ে মুছে পরিষ্কার সতেজ হয়ে পর্যটকদের মন প্রাণ ভরিয়ে তোলে। উল্লেখ্য
বর্ষাকালে পাহাড়ে ওঠার সময় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। এসময় পাহাড়ি পথ
ব্যবহার না করে সিড়ি পথটিই ব্যবহার করা সুবিধাজনক।
যারা উদ্ভিদবিজ্ঞান
নিয়ে পড়াশোনা করেন তাদের জন্য সীতাকুন্ড চন্দ্রনাথ পাহাড় গবেষণার জন্য একটি
উপযুক্ত স্থান। এখানে রয়েছে অসংখ্য পাহাড়ি গাছ-গাছরা, লতা-পাতা, গুল্ম জাতীয়
উদ্ভিদ।
সারা বছর জুড়েই অসংখ্য দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আনাগোনায় এই স্থানটি মুখরিত থাকে।
এখানে পর্যটকদের গাড়ি রাখার জন্য বিশাল একটি মাঠ রয়েছে। তবে এখানে বিশুদ্ধ খাবার
পানির বড়ই অভাব। সেজন্য পর্যটকদের সাথে করে খাবার পানি নিয়ে যেতে হয়।
প্রতি বছর বাংলা
ফাল্গুন মাসে (ইংরেজী ফেব্রুয়ারী-মার্চ মাস) বড় মেলা হয় যা শিবর্তুদশী মেলা
নামে পরিচিত।এ সময় দেশ-বিদেশের অনেক সাধু সন্যাসী এবং নর-নারী (বিশেষ করে ভারত,
নেপাল, শ্রীলংকা থেকে) এখানে আসেন।এ সময় এই এলাকা প্রচুর
জনাকীর্ণ হয়ে উঠে।
এটি একটি ভাল পিকনিক
স্পট, সাধারণত নভেম্বর থেকে মে পর্জন্ত এখানে প্রতিদিন হাজার
হাজার লোক পিকনিক অথবা ঘুরতে এখানে আসে ।এখানে ব্যাসকুণ্ডের পাশে একটি
বিশাল মাঠ আছে যা গাড়ী রাখা, রান্না করা সহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যায়।তবে
এখানে খাবার পানির কোন সুব্যবস্থা নেই, আপনাকেই খাবার পানির ব্যবস্থা করতে হবে
অথবা দোকান থেকে বোতলজাত পানি কিনে খেতে হবে।
সড়ক পথেঃ
ঢাকা থেকেঃ বিআরটিসি এর বাসগুলো ছাড়ে ঢাকা কমলাপুর টার্মিনাল থেকে।আর অন্যান্য
এসি, ননএসি বাস গুলো ছাড়ে সায়দাবাদ বাস ষ্টেশন থেকে। আরামদায়ক এবং নির্ভর যোগ্য
সার্ভিস গুলো হল এস.আলম ও সৌদিয়া, গ্রীনলাইন, সিল্ক লাইন, সোহাগ, বাগদাদ
এক্সপ্রেস, ইউনিক প্রভূতি। সবগুলো বাসই সীতাকুণ্ডে থামে।
চট্টগ্রাম থেকেঃ ঢাকা
সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাওয়ার বাসগুলো অলঙ্কার,একেখান, কর্ণেলহাট বাস ষ্টেশন
থেকে ছাড়ে। আর জেলার অভ্যন্তরের বিভিন্ন রুটের বাসগুলো মাদারবাড়ী, কদমতলী
বাসষ্টেশন থেকে ছাড়ে। চট্টগ্রাম থেকে সীতাকুণ্ডে আসতে হলে জেলার আভ্যন্তরীন রুটের
বাস গুলোতে ভ্রমণ করতে হবে। তা ছাড়াও অলঙ্কার থেকে কিছু ছোট গাড়ী ছাড়ে ( স্থানী
ভাবে মেক্সী নামে পরিচিত) সেগুলো করেও আসা যাবে।
রেলপথেঃ
ঢাকা থেকেঃ ঢাকা থেকে ছেড়েঁ আসা দ্রুতগামী ট্রেন “ঢাকা মেইল”-ই শুধু সীতাকুণ্ডে
থামে, এটি ঢাকা থেকে ছাড়ে রাত ১১টায় এবং সীতাকুণ্ডে পৌঁছে পরদিন সকাল ৬.৩০ থেকে
৭টায়। অন্যান্য আন্তঃ নগর ট্রেন গুলো সরাসরি চট্টগ্রামে চলেযায়। শুধুমাত্র
শিবর্তুদশী মেলার সময় সীতাকুণ্ডে থামে।
চট্টগ্রাম থেকেঃ চট্টগ্রাম
থেকে ৪টি আন্ত নগর ট্রেন ঢাকার উদ্দেশ্যে ছাড়ে (সকাল ৭টা, ৭.১৫
মিনিট, দুপুর ২টায় এবং রাত ১১টায়)। টিকেট অবশ্যই ২-৩দিন আগে সংগ্রহ করতে হয়।
চট্টগ্রাম থেকে কিছু লোকাল ট্রেনও ছাড়ে যেগুলো করে সীতাকুণ্ডে আসা যায়, এগুলো
ভোর ৫টায়, সকাল ৮টায়, ৯টায়, দুপুর ২টায় এবং সন্ধ্যা ৭টা ৩০মিনিটে,এগুলোর
সময়সূচী পরিবর্তনশীল।
আকাশ পথঃ
ঢাকা থেকে
চট্টগ্রামের পথে বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্স সহ বিভিন্ন কোম্পানীর ফ্লাইট আছে।অনেক
প্রতিষ্ঠান হওয়াতে এদের মধ্যে প্রতিযোগীতা বিদ্যামান ভাড়া সহ অন্যান্য সুযোগ
সুবিধা প্রায় কাছাকাছি।এই লেখাটি লেখার সময় ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আসতে বিমানে ৫০
মিনিট সময় নেয়।ভাড়া এবং সময়সূচী পরিবর্তনশীল হওয়ায় এগুলো এখানে দেয়া হয়নি,
তা বিমান সংস্থাগুলোর ওয়েবসাইট থেকে জানা যাবে।
সীতাকুণ্ডে কোন ভাল
আবাসিক হোটেল নেই,তাই রাতে থাকতে হলে চট্টগ্রাম শহড়ে চলে যেতে হবে।কিন্তু এখানে
৬টি ধর্মশালা আছে যার ৩টি বাংলাদেশ রেলওয়ের যে গুলো ব্রিটিশ সরকার তৈরী করে ছিল।
শিবর্তুদশী মেলার সময় এই ধর্মশালা গুলো ছাড়াও কিছু সাময়িক হোটেলে আগতরা থাকতে
পারে।