Monday, March 4, 2013

শেরপুর – অপরূপা পানিহাটা-তারানি

শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলা শহর থেকে প্রায় ১৯ কিলোমিটার দূরে রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নে অবস্থিত স্থানটি

উত্তরে নীলাভ-সবুজ তুরাকে আবছা আবরণে জড়িয়ে নিয়েছে কুয়াশার মতো মেঘ কখনো বা কুয়াশা নিজেই। দূরের টিলাগুলো কেবলই লুকোচুরি খেলে এরই আড়ালে। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ছোট ছোট পাহাড়গুলোকে ফাঁকি দিয়ে তুরার অববাহিকা থেকে সামনে সোজা এসে পশ্চিমে চলে গেছে পাহাড়ি নদী ভোগাই। একপাশে তার কাশবন আর অপর পাশে শত ফুট উঁচু দাঁড়িয়ে থাকা সবুজে জড়ানো পাহাড়। নদীর টলটলে স্বচ্ছ পানির নিচে গড়াগড়ি খাচ্ছে নুড়ি পাথরগুলো। সামনের একশ গজ দূরে ভারত অংশে পিঁচঢালা আকাবাঁকা রাস্তা পূর্ব থেকে পশ্চিমে চলে গেছে পাহাড়ের বুকচিরে আর মাঝেমধ্যেই হুসহাস করে ছুটে চলছে মালবাহী ট্রাকগুলো চতূর্দিকে ছোট ছোট অসংখ্য পাহাড়ের সাড়ি পূর্ব দিকের কয়েকটি পাহাড়ের গা ঘেঁষে ভোগাই নদীতে এসে মিশেছে ছোট একটি পাহাড়ি ঝরণা সেগুন, গজারী আর আকাশমনির বাগানে ঘুরতে ঘুরতে শোনা যাবে পাখ-পাখালির কিচির মিচির রয়েছে নানা প্রজাতির পাহাড়ি গাছ-গাছরা কখনো কখনো বিশেষ করে, ধানে থোর আসার সময় কিংবা ধান পাকার সময় দূরের গহীন পাহাড় থেকে বন্যহাতির আওয়াজও মিলে মাঝেমধ্যেই কখনো বা দূর থেকে তাদের দেখাও মেলে ভাগ্যবানদের এখানেই রয়েছে খ্রিষ্টানদের উপাসনালয়, ছোট একটি চিকিৎসা কেন্দ্র, বিদ্যালয় আর ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের থাকার জন্য হোস্টেল সেখানে শিশু-কিশোরদের কোলাহল


সামান্য পূর্বদিকটায় এগুলে উপজাতিদের বসবাসস্থল ফেক্কামারী উপজাতীয়রা মদ খেয়ে মাতাল অবস্থায় পড়ে থাকার নাম (উপজাতীয় ভাষায়) ‘ফেক্কা আর তাই পাড়াটি পানিহাতার অংশ হলেও ফেক্কামারী নামে স্থানীয়রা ডাকেন প্রায় ৪৫-৫০টি পরিবার পাহাড়বেষ্ঠিত পাড়ায় মিলেমিশে বসবাস করে সহজেই আপন করে নেয় তারা সবাইকে এর একটু পূর্বদিকে পানিহাতা বিল বিলের চতূর্পাশ ঘেঁষে রয়েছে পাহাড়ের সাড়ি বিলকে ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে ফিসারী বাইরে থেকে কেউ বুঝতেই পারবে না যে এতটুকু ভিতরে একেবারে জিরোপয়েন্ট সংলগ্ন এমন নান্দনিক দৃশ্য বা ঘুরে দেখার মতো জায়গা থাকতে পারে

 

তারানী পাহাড়ের ঢালে ভোগাই নদীর ঠিক উল্টো পাশে মেঠোপথের গা ঘেঁষে রয়েছে পাহাড়বেষ্ঠিত সবুজ গালিচা বিছানো খেলার প্রশস্ত মাঠ যেখানে বিকেল হলেই পাহাড়ি বালকরা মেতে ওঠে খেলায় সন্ধ্যা অব্দি চলে তাদের কোলাহল দর্শনার্থীরা চাইলে মাঠে বসেই খাওয়া-দাওয়া বা আড্ডা দেওয়ার কাজও সাড়তে পারেন অনায়াসেই এসব মিলে প্রকৃতি প্রেমীদের প্রতিনিয়ত আকর্ষণ করে অপরূপা পানিহাটা-তারানি পাহাড় অবশ্য পানিহাটা নামেই পরিচিতেরা জানেন কিন্তু সৌন্দর্য্যের ভাগটা শুধু পানিহাটাই নিতে পারেনি এর একটা অংশে ভাগ বসিয়েছে তারানি গ্রামের পাহাড় তাই দর্শণার্থীদের জন্য পানিহাটা-তারানি দুটোই উপভোগ্য


যেভাবে যাবেন:


ভারতের মেঘালয়ঘেঁষা শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলা শহর থেকে প্রায় ১৯ কিলোমিটার দূরে রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নে অবস্থিত স্থানটি। পৌর শহরের গড়কান্দা চৌরাস্তা মোড় হয়ে সোজা উত্তরে প্রথমে নাকুগাও পরে পূর্ব দিকটায় মোড় নিয়ে সৌন্দর্যমন্ডিত ভোগাই ব্রিজ পাড়ি দিতে হবে। এরপর সোজা পূর্ব দিকে প্রায় আড়াই থেকে তিন কিলোমিটার গেলে চায়না মোড়। মোড়ে এসেই আবারও গতিপথ বদলিয়ে যেতে হবে সোজা উত্তরে। উত্তরের রাস্তা ধরে প্রায় আধা কিলোমিটার গেলেই পানিহাটা-তারানির মাঝ বরাবর মূল পয়েন্টে যাওয়া যায়। ব্যক্তিগত উদ্যোগে রিকশা, সিএনজি অটোরিশা বা ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেলেও যাওয়া যায় নালিতাবাড়ী শহর থেকে মাত্র ৩৫-৪৫ মিনিটের ব্যবধানে এবং অল্প খরচের মধ্যেই। এতে মোটরসাইকেল ভাড়া আসা যাওয়ায় প্রায় দেড়শ-দু টাকার মতো লাগতে পারে। ইচ্ছে থাকলে বাস-মিনিবাস নিয়েও অনায়াসেই যেকোনো সময় ছুটে আসা যায় পানিহাটা-তারানীতে